৪ নভেম্বর ২০২৩, ভোরে ঘুম থেকে উঠে উবার কল দিলাম এয়ারপোর্ট যাব বলে, যেহেতু তখনো চারিদিক অন্ধকার তাই আমার এলাকার বাস স্ট্যান্ড পিক-আপ লোকেশন সেট করে উবার ডেকেছিলাম (ভিতরের দিকে ম্যাপ দেখলে রাইড বাতিল করে দিতে পারে ভেবেই বাস স্ট্যান্ড দেয়া)।
আমি বাসা থেকে বাস স্ট্যান্ড পৌছাই আনুমানিক ৫.৪৫ এ। আমার কাঁধে একটি ব্যাগ (যেখানে ল্যাপটপ, পাসপোর্ট টিকেট সহ গুরুত্বপূর্ন সব কিছু ছিল) আর হাতে ট্রলি (সব কাপড় চোপড় ছিল)। আশেপাশে তখন কেউ নাই, মসজিদে মানুষ নামায আদায় করছিল।
বাস স্ট্যান্ড গিয়ে আমি মোবাইল বের করে দেখতে থাকি গাড়ি কতদূর, গাড়ি যখন আমার দৃষ্টিগোচর হল ঠিক তখন রাস্তার উল্টা পাশ থেকে একটা বাইক এসে আমার একটু সামনে গিয়ে থামে। বাইকে ছিল দুজন এবং দুজনের মুখেই কাপড় দিয়ে ঢাকা। বাইকে থাকা পিছনের ছেলেটা বাইক থেকে নেমে তার হাতে থাকা চাপাতি বের করে এবং আমার দিকে দৌড়ে আসতে থাকে আর বলে ‘দৌড় দিলে কোপ দিমু’!
আমি ওর বাইক থেকে নামা দেখেই বুঝে যাই যে ওরা ছিনতাইকারী। আর যখনি বলে ‘দাড়া, দৌড় দিলে কোপ দিমু’ তখন আমি আমার ট্রলি রেখেই আমার এলাকার দিকে দৌড় দেই, আর চিৎকার দিয়ে মানুষ ঢাকতে থাকি যে ‘বাঁচাও, ছিনতাইকারী’। ছিনতাইকারী আমার পিছন পিছন অনেক খানি দৌড়ে আসে, আমার চিৎকার শুনে ২/৩ জন লোক আমার দিকে আসতে থাকে। এর ভিতর এক লোক হাতে ‘ইট’ নিয়ে আমাকে বাঁচাতে আসতে দেখে ছিনতাইকারী পিছ’পা হয়ে আমার ট্রলি নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
ট্রলি হারিয়ে আমি আবার বাসায় ফেরত আসি, আর হাতের কাছে থাকা ৩/৪ টা কাপড়-চোপর (সব আধোয়া, ইস্ত্রি ছাড়া) নিয়ে দ্রুত এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা হই। এয়ার পোর্টে দেখা হয় আমার ট্রুর পার্টনার Saidul Islam Mahmud ভাইয়ের সাথে।
ঢাকা থেকে ব্যাংকক, এবং ব্যাংকক থেকে ফুকেট পৌঁছাতে পৌঁছাতে আমাদের রাত হয়ে যায়। পরদিন আমরা ফিফি আইল্যান্ডে ঘুরাঘুরি, স্নকিং, খাওয়া-দাওয়া করি, সারাদিন ভালই কেটেছিল।
ফিফি আইল্যান্ডে থেকে ফেরার পথেই আমার কেমন যেন লাগছিল, একটু জ্বর জ্বর ভাব। সেই রাত থেকে ভীষণ জ্বর। দেশ থেকে নিয়ে আসা ন্যাপা খেয়ে কোনরকমে সে রাত পার করি। পরদিন আমাদের আবার ব্যাংকক আসতে হবে এবং সেখান থেকে পাতায়া শহরে। পুরো জার্নিতে আমি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পরি। 😰
পাতায়া আসার পর থেকে আমার জ্বরের সাথে বমি, লুজ মোশন শুরু হয়। ট্যুর পার্টনার Mahmud ভাই আমার অবস্থা দেখে ওনি নিজেও ঘাবড়ে যান। এবং সারাক্ষনি আমার সেবা করেন। বেচারা আমার জন্য কোথাও ঘুরতে যেতে পারে নাই। ভাই আমার মাথায় পানি দেয়া, শরীর মুছে দেয়া, ঔষধ/খাবার এনে দেয়া সহ অনেক যত্ন নিয়েছেন।
প্রতি মুহুর্তে আমার অবস্থা খারাপ হতে দেখে আমরা আমাদের ট্র্যাভেল এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করি, ওনারা আমাদের থাইল্যান্ডে অবস্থানরত একজন বাংলাদেশি ডাক্তারের সাথে ট্যাগ করিয়ে দেন। ঐ ডাক্তার আমার কথা শুনে কিছু মেডিসিন সাজেস্ট করে। সেগুলো খাই কিন্তু জ্বর কমে না। 😨
প্রচণ্ড জ্বর সাথে অরুচি, সব কিছুতেই বাজে গন্ধ। কিছুই খেতে পারতাম না। শুধু ডাবের পানি আর জুস খেয়ে দিন পার করছিলাম। এদিকে বাসার সবাই আমার জন্য দুশ্চিন্তা আর বার বার ফোন দিচ্ছে, আমার অবস্থা দেখে সবাই অনেক ভয় পেয়ে যায়। ফোন ধরার শক্তি পর্যন্ত আমার ছিল না।
পাতায়ায় আমাদের হোটেল থেকে বিচ দেখা যেত, আমারা ৪ দিন সেখানে ছিলাম। বিচ তো দূরের কথা, একটিবারের জন্য হোটেল থেকে বের হতে পারি নাই। এমনকি হোটেলের লবিতেও যেতে পারি নাই।
পাতায়া থেকে অসুস্থ শরীর নিয়ে অনেক কষ্টে ব্যাংকক আসি, ব্যাংকক আসার দিন থেকে শরীর একটু একটু করে ভাল হতে থাকে। আর দেশে আসার একদিন আগে মুটামুটি হাঁটাচলা করার শক্তি পাই। শেষ দিন কিছু কেনাকাটা করে দেশে ফিরি ১৩ তারিখ।
দেশে ফিরেই ১৪ তারিখ ডাক্তার দেখাই এবং বেশি কিছু পরীক্ষা করাই। পরীক্ষায় আমার ডেঙ্গু ধরা পরে। যদিও তখন আর জ্বর ছিল না। প্লাটিলেড তখন পাওয়া যায় ২,১০,০০০।
গত পরশু আবার টেস্ট করাই এবারের রিপোর্টে ডেঙ্গু নেগেটিভ আসে এবং প্লাটিলেড ৩,৬০,০০০ আসে। আলহামদুলিল্লাহ।
থাইল্যান্ডের পুরোটা সময় Mahmud ভাই আমার আপন ভাইয়ের ভূমিকায় ছিলেন। ভাই না থাকলে আমি হয়ত আরো ভয়ংকর বিপদে পড়তাম।
আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না। শুধু দোয়া আর ভালোবাসা নিবেন। ❤